শামীম শাহেদ। নির্মাতা, অভিনেতা ও টিভি ব্যক্তিত্ব। বর্তমানে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল বাংলাভিশনের অনুষ্ঠান প্রধানের দ্বায়িত্ব পালন করছেন। শুক্রবার (৩১ মার্চ) দশম বর্ষ পূর্তি করে একাদশ বর্ষে পদার্পণ করতে যাচ্ছে বাংলাভিশন। বাংলাভিশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, নির্মাণ, অভিনয় নিয়ে কথা বলেছেন পূর্বপশ্চিমের সঙ্গে। সাক্ষৎকারটি নিয়েছেন সৈয়দ নূর-ই-আলম

পূর্বপশ্চিম: দশ বছর একটা চ্যানেলের জন্য বেশি সময় নয় আবার কম সময়ও নয়,  আপনাদের অর্জন কতটুকু?

শামীম শাহেদ: আপনার কথার সুর ধরে আমি বলতে চাই দশ বছরে আমাদের অর্জন খুব বেশি নয় আবার খুব কমও নয়। এই সময়টুকুর মধ্যে আমরা দর্শকের মনে আলাদা করে জায়গা করে নিতে পেরেছি। আমাদের বলার মতো বেশ কিছু অনুষ্ঠান তৈরি হয়েছে। সংবাদে নিরপেক্ষতার বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। জনপ্রিয় নাটকের একটি বড় তালিকা তৈরি হয়েছে।

পূর্বপশ্চিম: বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কী কী আয়োজন থাকছে?

শামীম শাহেদ: দেখুন, আমাদের দেশে এতগুলো চ্যানেল, সবার এত এত ব্যস্ততা, তার মধ্যে একটা চ্যানেলের জন্মদিন এটা দর্শকের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ আমার সন্দেহ আছে। তারপরও আমাদের শুভাকাঙ্খিরা আছেন, শিল্পী-কলাকুশলীরা আছেন, ক্যাবল অপারেটার-বিজ্ঞাপন দাতারা আছেন, তারা নিশ্চয়ই আমাদেরকে শুভ-কামনা জানাতে আসবেন। তাদের জন্য দিনব্যাপী বাংলাভিশন দপ্তরে বিশেষ আয়োজনের পাশাপাশি পর্দায় থাকছে দুই দিনব্যাপী বিশেষ আয়োজন।

Shamim 3

পূর্বপশ্চিম: বাংলাভিশনের প্রথম দিকের পথচলার গল্প শুনতে চাই…

শামীম শাহেদ: সত্যি সত্যি প্রচন্ড উন্মাদনা নিয়ে আমরা বাংলাভিশন শুরু করেছিলাম। তখন এত সুন্দর বসার জায়গাগুলো ছিল না। একটা ফ্লোরে খোলা জায়গায় বসে অফিস করতাম। তারপর অপি করিমের আমার আমি, মামুনুর রশিদের সময় অসময়, শারমিন লাকির আপনার আগামী, আসিফ নজরুলের আর্টিক্যাল থার্টিনাইন এসবের মধ্যদিয়ে ধীরে ধীরে আলাদা হতে লাগল। তবে এই যুদ্ধটা চিরন্তন। চলতেই থাকবে।

পূর্বপশ্চিম: অনেকেরই অভিযোগ কেউ আমাদের দেশের চ্যানেলগুলো দেখে না। আপনার মতামত কী?

শামীম শাহেদ: দেখুন, একজন বাংলাদেশি পৃথিবীর যেকোনো জায়গাতেই থাকুক না কেন প্রথমে বাংলাদেশের চ্যানেল দেখতে চায়। না পেলে সহজলভ্য অন্য দেশের বাংলা চ্যানেলগুলো দেখার চেষ্টা করে। তাও না পেলে তখন অন্য চ্যানেল দেখে। ফলে এটা নিশ্চিন্তে বলা যায়, দেখার উপযোগি কিছু থাকলে সবাই আমাদের চ্যানেল দেখবে। এর একটা জলজ্যান্ত প্রমান আমাদের ঈদের আয়োজনগুলো। তখন কিন্তু আমাদের টিআরপি অন্য যেকোনো বিদেশী চ্যানেলের চাইতে বেশি থাকে। তবে ভালো অনুষ্ঠান প্রচারের কাজটা অনেক কঠিন।

Shamim 2

পূর্বপশ্চিম: আপনি দ্বিতীয় দফায় যোগ দিয়েছেন তাও প্রায় ছয় বছর হতে চলল। এর মধ্যে বাংলাভিশনকে কীভাবে আলাদা করেছেন?

শামীম শাহেদ: এই প্রশ্নটার সঙ্গে আপনার আগের প্রশ্নটা যুক্ত। অনেকেই বলে আমাদের দেশের চ্যানেল নাকি আমাদের দর্শক দেখে না। কিন্তু আমি তো মনেকরি বাংলাভিশন অনেকের কাছেই জনপ্রিয়। যেমন ধরেন, আরমান ভাই, সিকান্দার বক্স, ফরমালিন, অ-এর গল্প, হাড়কিপ্টে, আমি এখন কী করব, বিপাশার অতিথি, মনের কথা এই নামগুলো অনেকের কাছেই পছন্দের নাম। তাহলে আমরা জোড় দিয়ে বলতে পারি, বাংলাভিশন কিছুটা হলেও আলাদা হতে পেরেছে।

Shamim1টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান নিয়ে আপনার আগামীর পরিকল্পনা কী?

শামীম শাহেদ: সামনে তিন-চার বছর বাংলাভিশনকে আমরা পারিবারিক চ্যানেল বানানোর চেষ্টা করব। পারিবারিক বন্ধন কতটা জরুরি তা তুলে ধরার চেষ্টা করব। পাশাপাশি ফান থাকবেই। আমি ফান ভক্ত মানুষ। আর আমার ব্যাক্তিগত পরিকল্পনা যদি জানতে চান তাহলে বলব, আমার পরিকল্পনা সামনের সময়টাতে অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিজ্ঞাপন নিয়েও আমি কাজ করতে চাই। এটা আমার নতুন চ্যালেঞ্জ।

পূর্বপশ্চিম: নির্মাতা শামীম শাহেদের খবর বলুন…

শামীম শাহেদ: আমি নিজেকে নির্মাতা হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তবে টিভি চ্যানেলের দ্বায়িত্বের কারণে এখন তুলনামূলক কম নাটক নির্মাণ করছি। প্রতি ঈদ কেন্দ্রিক নাটক নির্মাণ করছি। সামনের ঈদে দুটি নাটক বানাবো। নাটকদুটি হচ্ছে ‘রঙিন দ্বিধা’ ও ‘কল্পচূড়া’। প্রথমটিতে অভিনয় করবেন রিয়াজ, দিপা খন্দকার, স্পর্শিয়া। দ্বিতীয় নাটকটিতে অভিনয় শিল্পী এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কয়েকদিনের মধ্যে আমেরিকা যাবো। সেখান থেকে এসে নাটক দুটি নির্মাণের কাজে হাত দেবো।

আপনার সমসাময়িক অনেকেই সিনেমা নির্মাণ করছেন। আপনি কখন শুরু করছেন?

শামীম শাহেদ: আমার সর্বশেষ লক্ষ্য সিনেমা নির্মাণ। আগের চেয়ে সিনেমার দর্শক এখন বেড়েছে। হলগুলোর পরিবেশও এখন ভালো হয়েছে। আশা করছি, আগামী বছর সিনেমার কাজে নামতে পারবো।

আপনিতো একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, তাই না?

শামীম শাহেদ: হ্যাঁ। শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি পার্টটাইম সহযোগি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছি।

মীনা অ্যাওয়ার্ডের বিচারক হিসেবে কেমন উপভোগ করছেন?

শামীম শাহেদ: এটি একটি সম্মানজনক পুরস্কার। এখানে আিম বিচারক হিসেবে কাজ করছি। ৮ বছর ধরেই এ দ্বায়িত্বটি পালন করছি আমি।